কার ওয়াশ
এর আগে একবার সন্ধ্যার একটু পরে বের হয়েছি। হঠাৎ ঠ্যাস করে একটা শব্দ হলো। মনে হল গাড়ির উপর কী যেন পড়েছে। গাড়ী থামিয়ে নেমে আসলাম। আশেপাশে কেউ নাই। পেছনে গিয়ে দেখি গাড়ির ট্রাংক-এর উপর কে বা কারা ডিম ছুঁড়ে মেরেছে। কুসুম ছড়িয়ে একাকার অবস্থা। কিন্তু কাউকে না দেখে সন্দেহ বেড়ে গেল। ভালো করে খোলসের আকৃতি দেখে মোটামুটি নিশ্চিত হলাম পাখির ডিম। ছবিও তুলে রাখলাম। কিন্তু গাড়ির উপর ল্যাপ্টানো ডিমের ছবি নিশ্চই দেখতে ভালো লাগবেনা-- তাই দিচ্ছি না।
পাখির প্রতি আলাদা টান আছে বলেই, নাকি দৈবক্রমে-- আমার পার্কিং স্পেসটা ঠিক ঠিক গাছের সবচেয়ে ব্যস্ত ডালটার নীচে। সেখানে ঘুঘু-রবিন-শালিক থেকে শুরু করে বাদামী ও কালো-রঙের কাঠবেড়ালীদের বিস্তর যাতায়াত। আশেপাশের গাছগুলোর ডালে ডালে থোকায় থোকায় ব্ল্যাকবেরী। পাখি সেগুলো খায় আর পায়খানা করে আমার গাড়ির উপর। পাখির পায়খানাকে এরা বলে বার্ডড্রপ-- কী সুন্দর নাম! এরকম আগেও হয়েছে; পয়সা দিয়ে সেই ময়লা সাফ করে নিয়ে আসি আর বিকেলেই নামে ঝমাঝম বৃষ্টি। টাকা পুরাই গচ্ছা। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে গত দুইদিনের জমানো পায়খানা নিয়ে আজ সকালে ভ্রু কুঁচকে ঠিক করলাম গাড়ি আজ ধুতেই হবে। তারপর কী মনে করে যেন গেলাম না।
বিকেলে নামলো ঝমাঝম বৃষ্টি। গত সপ্তাহের তালপাকা গরমের পরে একটু খানি স্বস্তি। বেঁচে গেল কার ওয়াশের খরচ।
ব্ল্যাক এন্ড ডেকার
ব্ল্যাক এন্ড ডেকার নামে একটা ব্রান্ড উত্তর আমেরিকায় খুব জনপ্রিয়। কিন্তু কোন এক কারণে আমার সাথে এর কখনোই মিটমাট হয়না। ঘটনার শুরু সেই ২০০৪ সালে, বউ যখন আমার সাথে যোগ দিল। তখন কানাডায় নতুন। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। বাচ্চা ছোট। কোন এক কারণে এসব দেশের গারবার আর হাইঞ্জ খাওয়ানোয় আমার প্রবল অরুচি। খাবার পিশে খাওয়ানোর দরকার। তাই গরীবের ভরসা ওয়াল মার্ট থেকে কিনলাম ২৫ ডলারের ব্লেণ্ডার। ১ ডলার খরচ করতেই যেখানে হিসাব করতে হতো, সেখানে ২৫ ডলার অনেক বড়। যাই হোক, কাজের কাজ হচ্ছিল ভালোই। কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সেটা গেল বিগড়ে।
দোকান থেকে জিনিস কিনে ব্যবহার করে সেটা যে আবার ফেরত দেয়া যায় সে জ্ঞান তখনো হয়নি। ওপাড়ে বোনকে দু:খের কথা জানাতেই বললেন ফেরত দিয়ে আসতে। আমি বলি, রিসিট তো নাই। তারপরেও বোনের পিড়াপিড়িতে ওয়াল মার্টে নিয়ে গেলাম ফেরত দিতে। বললাম এটা কাজ করেনা। রিসিট চাইল। বললাম রিসিট নাই, ফেলে দিয়েছি। আমাকে অবাক করে দিয়ে সেই পোড়া ব্ল্যাক-এন্ড-ডেকার ফেরত নিয়ে আমাকে বলল শেলফ থেকে আরেকটা পিক করে নিতে। এত অবাক আমি কানাডায় এসে তখনো হইনি।
কিন্তু সেই অানন্দও মাটি হয়ে গেল সপ্তাহ দুয়েক পরে। এটারও একই অবস্থা। ইন্তেকাল করলেন। তবে এবার রিসিট ছিল। পর পর দুইবার জ্বলে যাওয়ার পর ঠিক করলাম অন্য ওয়াল মার্ট থেকে বদলে আনি। শহরের মাউন্টেনের উপরে আরেকটা ওয়াল মার্ট আছে। সেখান থেকে প্রায় ডবল দামের আরেকটা কিনে আনলাম। ভাবলাম প্রথমটার টাকা তো আশা করিনি যে ফেরত পাবো, তাই বেশী দাম দিয়ে নতুন একটা নিলাম। শুধু দামের বাড়তি অংশটুকু পে করলাম।
এর মধ্যে নতুন বাসায় উঠলাম। ভেবেছিলাম পুরনো বাসায় হয়তো কোন ইলেক্ট্রিকাল সমস্যার কারণে ওগুলো জ্বলে যাচ্ছিল। আমাকে অবাক করে দিয়ে মাসখানেক পরেই আবার সেই ব্লেণ্ডার ইন্তেকাল করল
চরম বিরক্তির সাথে ঠিক করলাম ব্ল্যাক-এন্ড-ডেকারের আর কোন জিনিই কিনবোনা। বদল হিসেবে জিই-র একটা ম্যানুয়াল ব্লেণ্ডার কিনে বাকী টাকা ক্রেডিট রিসিট হিসেবে নিয়ে এলাম। সেই ব্লেন্ডার প্রায় ৪ বছর চালিয়েছি।
আবারও ব্ল্যাক-এণ্ড-ডেকার
কিন্তু সেই একই ভুল আমি আবারো করলাম। গত সপ্তাহের প্রচণ্ড গরমে পরিবারের কথা চিন্তা করে ঠিক করলাম এবার একটা এসি কেনা যাক। কানাডায় এসে এতদিনেও আমার বাসায় এসি নাই শুনে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে আমাকে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো হয়েছে কিনা।
যাই হোক ওয়াল মার্টের তিনটা শোরুমের একটাতেও যখন কোন এসি পাওয়া গেলনা তখন আরো কয়েক জায়গায় ঢুঁ মারলাম। সেখানেও পছন্দ (বাজেট) মত কিছু পাওয়া গেলনা। সব এসি নাকি বিক্রি হয়ে গেছে। হওয়ারই কথা-- যা গরম পড়েছে এবার!
শেষ পর্যন্ত ক্যানাডিয়ান টায়ারে এসি পাওয়া গেল-- সেই ব্ল্যাক এন্ড ডেকার। উপায় নাই দেখে কিনে আনলাম। সবই ঠিক আছে খালি একটু শব্দ করে। মনে হয় আমি লঞ্চে চড়ে বরিশাল যাচ্ছি। এত শব্দ যে টেলিফোনে কথা বলা মুশকিল, টিভি দেখতে গেলে ভলিউম বাড়িয়ে ৮০-৮৫ এ দিতে হয়! চরম বিরক্তি লাগা শুরু হলো। কোনমতে রাত পার করে পরদিন নিয়ে গেলাম ফেরত দিতে। কিন্তু বিধি বাম। এসি নাকি ফেরত দেয়া যায়না। উল্টো আমি কেন এসি কেনার আগে “রিসার্চ” করিনি সেটা নিয়ে একটা বক্তৃতা দিয়ে দিল।
কী আর করা। বাসায় ফিরে আবার সেই লঞ্চের ইঞ্জিন ইনস্টল করলাম। হায়রে ব্ল্যাক-এণ্ড-ডেকার!
No comments:
Post a Comment