2014/10/03

নগরে নিসর্গ

। এক ।

মধ্য দুপুরে জানালায় ভারী পর্দা দিয়ে অন্ধকার ঘরে দিবাস্বপ্ন দেখতে দেখতে যখন দিবানিদ্রায় যাওয়ার সময় হল ঠিক তখনই খুব কাছে থেকে একটা ঘুঘু ডেকে উঠল। একবার, দুইবার। এর পর থেমে থেমে আরো কয়েকবার।

তন্দ্রা মতো ধরেছিল। ঘুঘুর ডাকে তন্দ্রার মধ্যেই স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হল। আমি কোথায়? কোথায় আমি? তিরিশ বছর আগের কোন এক দুপুরে ঘরের দরোজা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিল যে কিশোরটি--এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে ঘুম ভেঙে জেগে উঠে সেই খোলা দরোজা দিয়ে দেখেছিল লাল-মরিচে ভরা বাড়ির আঙিনায় রৌদ্রের মেলা, আজ বহুদিন পরে ঘুঘুর ডাক যেন নিয়ে গেল সেই কৈশোরে!

ভর দুপুরে ক্লান্ত পথিকের মতোই অলস স্বরে ডাকছিল সেই ঘুঘু। অনেকক্ষণ সেই ডাক না শুনে তন্দ্রা ছুটে গেলে নিজেকে আবিষ্কার করি কাগজের তৈরী ঘরে পাতা অস্হায়ী বিছানায়। কী অদ্ভুত জীবন্ত সেই স্মৃতি! স্মৃতির সেই অযুত-নিযুত গলি পথের দিশা খুঁজতেই আবারো তন্দ্রা এলো, সেই সাথে ফিরে এল অগণিত স্মৃতি যেন একটানে দেখে ফেলা বায়োস্কোপের সুদীর্ঘ রীল-- স্টেশনে দাঁড়িয়ে সদ্য মিস করা ট্রেনের যাত্রীর মতো অপলক দৃষ্টি হারায় যার শেষ বিন্দুটুকু।

। দুই ।

এখন কয়টা বাজে?
ঘড়ি দেখবার সামর্থ্য উধাও।

হয়তো মধ্যরাতের একটু পর। দরোজার ওপাশে পার্কিং লট। মাঝখানে কংক্রিটের ওয়াকওয়ে।  কংক্রিটের উপর টপ টপ শব্দ করে  বৃষ্টি পড়ছে। এরই মধ্যে কোত্থেকে আদুরে গলায় কাকের বাচ্চার মতো ডাক শোনা গেল। নিশ্চয়ই সেই ঘুঘু উপরের কোন ঘুলঘুলিতে বাসা বেঁধেছে। আশেপাশে কোন কাকের দেখা মেলেনি কোনদিন। অথচ কাক দেখা যায় রকি পর্বতমালায়--১০ হাজার ফুট উপরে-- আলপাইন তুন্দ্রায়।

অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে ঘর পেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াই। সামনে একইভাবে খানিকটা বাঁকা করে পার্ক করা পুরনো সেই গাড়ি, তার ওপাশে আবার দালান, দালানের উপর আকাশ, আকাশে ইতস্তত মেঘ অলস গতিতে সময় কাটাচ্ছে। আধা একটা চাঁদ উঠেছে--কালো আকাশে অন্যের আলোয় নিজেকে সাজিয়েছে--যেন আমার জন্যই তার অপেক্ষা।

।তিন।

অক্টোবরে চলে এলো। শীতও আসি আসি করছে। আজ সকালে ধূমায়িত মেঘ যখন নেমে এসেছিল স্কুলের মাঠে, সূর্য তখন প্রাণান্ত চেষ্টা করছিল সেই আবরণ ছিঁড়ে ফেলতে। রকির চূড়ায় জমতে শুরু করেছে শাদা বরফ -- এভিনিউ ১২০ থেকে দেখে মনে হয় যেন তিমির পিঠে জমানো ফেনা। উপরে নিশ্চল নিশ্চুপ মেঘের দল ভীর করে আছে, আর নীচে নীলচে রকি মাউন্টেন সৃষ্টি করেছে এক অদ্ভুত কালার কম্বিনেশন। চোখের দেখা আর ক্যামেরায় দেখা এক নয়। তাই ক্যামেরা ও চোখ রয়ে যায় যার যার স্থানে।

No comments:

Post a Comment