॥এক॥
মেঘবতীদের ভেজা চুল যখন জলের ভারে ভরে ওঠে, সে চুল শুকাতে তখন তারা নেমে আসে রকি মাউন্টেনের উপর। একসাথে তারা মেলে দেয় তাদের চুল, দূর থেকে মনে হয় যেন মায়ের শাড়ির জবুথবু আঁচল--এখনই ঝরঝর করে নেমে আসবে শ্রাবণ-ধারার মতো।
তারপর বৃষ্টি নামে। তার সাথে চলে সুর্যের লুকোচুরি। এই রোদ, এই বৃষ্টি--বৃষ্টির সাথে রোদ, রোদের সাথে বৃষ্টি।
ক্যামেরাটা সাথে নেই বলে দু:খ বোধ হয় হয়তো। পরক্ষণেই বৃষ্টির কথা চিন্তা করে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বরং আফসোস হয় চিত্রকর হইনি বলে। নয়তো ক্যানভাস মেলে ধরে পশ্চিমমমুখী রাস্তাটার ধারে বসে যেতাম তখনই। যতবার দেখি ততবার সেই অনুভূতি--ছবিটা যদি ফ্রেমে বাঁধা যেতো!
ছবিটি তোলা হয়না বলে একদিক থেকে ভালোই হয়--কিছু একটা লেখার অনুসঙ্গ পাওয়া যায়।
॥ দুই॥
নগরে বসন্ত এসেছে। আর তার ছোঁয়া লেগেছে রাস্তার পাশে জীর্ণ ঘাসে, গাছের শীর্ণ শাখায়, পার্কের লেইকে, বুনো হাঁসের পালকে। কানাডা গুজ-এর বাচ্চারা পেয়েছে নতুন ডানা--তারা উড়ছে সকাল ও সন্ধ্যার আকাশে। আজ নতুন প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে ফুরফুরে ঘাসের ফুলে, বুনো ড্যানডেলিওনে, আর নি:সঙ্গ পর্বতে।
এখানে বসন্তে বৃষ্টি নামে যখন তখন। কখনো টিপ টিপানি আবার কখনো কালবৈশাখি। বাড়ির পিছনে বিরাট খামারবাড়ি। রাস্তা থেকে দেখা যায় সেখানের সবুজ ঘাসের মাঠ, দূরে রকি মাউন্টেনের রোদ মাখানো চূড়া। খামারে ঘোড়া আছে, গরু আছে, আছে খচ্চর। সেদিন ভর দুপুরে দেখি সবগুলো ঘোড়া একজায়গায় জড়ো হয়েছে। অনতিদূরে গরুগুলো জটলা করে ছিল--মা গরু, বাবা গরু, বাচ্চা গরু, তার মাঝে দুটো খচ্চর।
বসন্তে মানুষ বের হয়েছে ঘরের বাইরে। হাঁটছে, দৌড়াচ্ছে পার্কে; যোগাসনে বসে আছে কেউ কেউ। পার্কের বেঞ্চগুলো ঝকঝক করছে। বয়স্করা সেখানে বসে জিরোচ্ছে। কেউবা নতুন ঘাসের ঘ্রাণ পেতে শরীর মেলে দিয়েছে বিকেলের নরম রোদে। মাঝখানে পাতাঝরা গাছ দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে।
॥ তিন ॥
দাসের জীবন হলেও তা নিজেরই বেছে নেয়া। মুক্ত দাসের মতো; কাজের দাস। কখনো সময় হলে, কখনো সময় করে-- বেরিয়ে পড়া যতটা মনে হয় ততটা কঠিন নয়।
সেমিস্টার শেষ, তাই ফরমায়েসি কাজের চাপ নেই। তবে নিজের টেনে নেয়া বোঝা মাথার উপর যথেষ্ট ভার সৃষ্টি করে রেখেছে। প্রকৃতি এখন সাজবে; এখন সাজার সময়--এই বোঝা মাঝে মাঝে মাথা থেকে নামিয়ে রেখে একটুখানি বৈরাগি সাজতে ইচ্ছে করে। যাব যাব করে একদিন চলে যাই বার লেইকে (Barr Lake)।
বার লেইক প্রাকৃতিক লেইক নয়--মানুষের বানানো। সেখানে প্রমোদতরী নামানোর ব্যবস্থা আছে। আছে ঈগলের বাসা হরেক রকমের পাখি, কায়োট (Coyote), আর বুনো শিয়াল। ভর দুপুরে বন্য প্রাণির দেখা মিলবেনা। তাই ইতিউতি ঘোরাঘুরি শেষে লম্বা ঘাসের বন পেরিয়ে দক্ষিণে যেতেই দেখি বন্যার পানির মতো পানি উঠে এসেছে ডাঙ্গায়। সেখানে কতক পুরনো মরা গাছের গুড়ি ভাসছে। এদিক ওদিক যেদিকে তাকাই সবকিছু দেখা যায়। কদিন পরে এই শুকনো মরা ঘাসের বন মেতে উঠবে প্রাণের ছোঁয়ায়, লাল-ডানা কালো পাখি (Red winged Blackbird) নেচে বেড়াবে শাখা থেকে শাখায়।
হঠাৎ সাপে-ধরা ব্যাঙের আর্তচিৎকারের মতো শোনা গেল। সাবধানে ঘাসের বন ছেড়ে বোর্ডওয়াকে উঠে পড়ি। তারপর উত্তরে তাকাতেই দেখি পাতাহীন গাছগুলো এক সারিতে দাঁড়িয়ে আছে কারো প্রতীক্ষায়। উপরে নীল আকাশ, লেইকের পানিতে তার স্বচ্ছ প্রতিবম্ব সৃষ্টি করেছে এক অদ্ভুত দৃশ্যের। এ দৃশ্য ধারণ করার জন্য নয়, কেবল দৃষ্টি দিয়ে উপভোগ করার জন্য।
মেঘবতীদের ভেজা চুল যখন জলের ভারে ভরে ওঠে, সে চুল শুকাতে তখন তারা নেমে আসে রকি মাউন্টেনের উপর। একসাথে তারা মেলে দেয় তাদের চুল, দূর থেকে মনে হয় যেন মায়ের শাড়ির জবুথবু আঁচল--এখনই ঝরঝর করে নেমে আসবে শ্রাবণ-ধারার মতো।
তারপর বৃষ্টি নামে। তার সাথে চলে সুর্যের লুকোচুরি। এই রোদ, এই বৃষ্টি--বৃষ্টির সাথে রোদ, রোদের সাথে বৃষ্টি।
ক্যামেরাটা সাথে নেই বলে দু:খ বোধ হয় হয়তো। পরক্ষণেই বৃষ্টির কথা চিন্তা করে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বরং আফসোস হয় চিত্রকর হইনি বলে। নয়তো ক্যানভাস মেলে ধরে পশ্চিমমমুখী রাস্তাটার ধারে বসে যেতাম তখনই। যতবার দেখি ততবার সেই অনুভূতি--ছবিটা যদি ফ্রেমে বাঁধা যেতো!
ছবিটি তোলা হয়না বলে একদিক থেকে ভালোই হয়--কিছু একটা লেখার অনুসঙ্গ পাওয়া যায়।
॥ দুই॥
নগরে বসন্ত এসেছে। আর তার ছোঁয়া লেগেছে রাস্তার পাশে জীর্ণ ঘাসে, গাছের শীর্ণ শাখায়, পার্কের লেইকে, বুনো হাঁসের পালকে। কানাডা গুজ-এর বাচ্চারা পেয়েছে নতুন ডানা--তারা উড়ছে সকাল ও সন্ধ্যার আকাশে। আজ নতুন প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে ফুরফুরে ঘাসের ফুলে, বুনো ড্যানডেলিওনে, আর নি:সঙ্গ পর্বতে।
এখানে বসন্তে বৃষ্টি নামে যখন তখন। কখনো টিপ টিপানি আবার কখনো কালবৈশাখি। বাড়ির পিছনে বিরাট খামারবাড়ি। রাস্তা থেকে দেখা যায় সেখানের সবুজ ঘাসের মাঠ, দূরে রকি মাউন্টেনের রোদ মাখানো চূড়া। খামারে ঘোড়া আছে, গরু আছে, আছে খচ্চর। সেদিন ভর দুপুরে দেখি সবগুলো ঘোড়া একজায়গায় জড়ো হয়েছে। অনতিদূরে গরুগুলো জটলা করে ছিল--মা গরু, বাবা গরু, বাচ্চা গরু, তার মাঝে দুটো খচ্চর।
বসন্তে মানুষ বের হয়েছে ঘরের বাইরে। হাঁটছে, দৌড়াচ্ছে পার্কে; যোগাসনে বসে আছে কেউ কেউ। পার্কের বেঞ্চগুলো ঝকঝক করছে। বয়স্করা সেখানে বসে জিরোচ্ছে। কেউবা নতুন ঘাসের ঘ্রাণ পেতে শরীর মেলে দিয়েছে বিকেলের নরম রোদে। মাঝখানে পাতাঝরা গাছ দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে।
॥ তিন ॥
দাসের জীবন হলেও তা নিজেরই বেছে নেয়া। মুক্ত দাসের মতো; কাজের দাস। কখনো সময় হলে, কখনো সময় করে-- বেরিয়ে পড়া যতটা মনে হয় ততটা কঠিন নয়।
সেমিস্টার শেষ, তাই ফরমায়েসি কাজের চাপ নেই। তবে নিজের টেনে নেয়া বোঝা মাথার উপর যথেষ্ট ভার সৃষ্টি করে রেখেছে। প্রকৃতি এখন সাজবে; এখন সাজার সময়--এই বোঝা মাঝে মাঝে মাথা থেকে নামিয়ে রেখে একটুখানি বৈরাগি সাজতে ইচ্ছে করে। যাব যাব করে একদিন চলে যাই বার লেইকে (Barr Lake)।
বার লেইক প্রাকৃতিক লেইক নয়--মানুষের বানানো। সেখানে প্রমোদতরী নামানোর ব্যবস্থা আছে। আছে ঈগলের বাসা হরেক রকমের পাখি, কায়োট (Coyote), আর বুনো শিয়াল। ভর দুপুরে বন্য প্রাণির দেখা মিলবেনা। তাই ইতিউতি ঘোরাঘুরি শেষে লম্বা ঘাসের বন পেরিয়ে দক্ষিণে যেতেই দেখি বন্যার পানির মতো পানি উঠে এসেছে ডাঙ্গায়। সেখানে কতক পুরনো মরা গাছের গুড়ি ভাসছে। এদিক ওদিক যেদিকে তাকাই সবকিছু দেখা যায়। কদিন পরে এই শুকনো মরা ঘাসের বন মেতে উঠবে প্রাণের ছোঁয়ায়, লাল-ডানা কালো পাখি (Red winged Blackbird) নেচে বেড়াবে শাখা থেকে শাখায়।
হঠাৎ সাপে-ধরা ব্যাঙের আর্তচিৎকারের মতো শোনা গেল। সাবধানে ঘাসের বন ছেড়ে বোর্ডওয়াকে উঠে পড়ি। তারপর উত্তরে তাকাতেই দেখি পাতাহীন গাছগুলো এক সারিতে দাঁড়িয়ে আছে কারো প্রতীক্ষায়। উপরে নীল আকাশ, লেইকের পানিতে তার স্বচ্ছ প্রতিবম্ব সৃষ্টি করেছে এক অদ্ভুত দৃশ্যের। এ দৃশ্য ধারণ করার জন্য নয়, কেবল দৃষ্টি দিয়ে উপভোগ করার জন্য।
No comments:
Post a Comment