সেদিন কিংকং তার ব্লগে লিখেছিল জীবনটা বোধহয় ১৪ইঞ্চি মনিটরে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। কথা একেবারে বাড়িয়ে বলা নয়। অল্পবিস্তর সবারই মনে হয় একই অবস্থা। সকাল সাড়ে ছয়টায় দিন শুরু হয়, সুর্য ওঠারও দেড় ঘন্টা আগে। ভাবতেই অবাক লাগে। দেশে থাকতে কোনদিন সূর্য ওঠার আগে উঠেছি বলে মনে পড়েনা। তেমনটি হতো শুধুমাত্র গ্রামে গেলে কিংবা দেহঘড়িতে ব্যাপক কোন পরিবর্তন ঘটলে। এখানে দিনের প্রায় নব্বই ভাগ সময়ই কাটে মনিটর নিয়ে। আমার পড়াশুনার যে ধরন, তাতে কাজকারবার সব এই চোদ্দ ইঞ্চি মনিটরের সামনেই। তার উপর এক ট্যাবে জিমেইল, আরেক ট্যাবে সচলায়তন: এ দুটো খোলা থাকবেই।
ফল (Fall) অবশেষে এলো। প্রকৃতি হলুদ হলো, লাল হলো, কমলা হলো, পাকা আমের মতো রঙ ধারণ করলো। কিন্তু আকাশ তার গোমরা মুখ আলোকিত করলোনা। হঠাৎ ঘন্টা খানিকের জন্য হয়তো সূর্য দেখা দেয়, বাকী সময় আবারো সেই মেঘলা অন্ধকার। গত দুইদিন তেমনি আলোকিত ছিল। হলে হবে কি বউয়ের মিডটার্ম পরীক্ষা, তাই ঘরদোর-বাচ্চা দেখাশোনার সাময়িক ভার আমার উপর।
সেদিন রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০০৯। মেয়ের সময় কাটাতে সাথে নিয়ে বাইরে বের হই। ঝকঝকে রোদ, ১৭ডিগ্রি সেলসিয়াস, সুন্দর আবহাওয়া। উইন্ডজরের সমস্যা হলো প্রচণ্ড বাতাস। সেদিক থেকে এখন ভালই আছে- বাতাস নেই বললেই চলে। আমার হাতে ক্যামেরার ব্যাগ। মেয়েকে ক্যামেরার ব্যাটারি কেন কিনে দিচ্ছিনা সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ গাঁইগুঁই করে বাইনোকুলার ঘাড়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
ইউনিভার্সির কাছাকাছি (ওয়াইনডট আর আসকিন এভিনিউ) একটা জায়গায় ম্যাপল গাছগুলোর গায়ে যেন আগুন ধরে গিয়েছে। ছবি তুলে সেটা দেখানো অসম্ভব। তবুও ডকুমেন্ট হিসেবে রাখার জন্যই তোলা। এসব ছবিতে ডিটেইলস আনতে হাই কোয়ালিটির লেন্স দরকার; আমার সেটা নেই। অথবা ক্লোজআপ করা যেতে পারে, সেক্ষেত্রে পুরো পরিবেশটা ধরা সম্ভব নয়।
ছবি: ১
ছবি: ২
ছবি: ৩
ছবি: ৪
আমার দেখাদেখি মেয়েও ছবি তুলতে চায়। প্রথম প্রথম ক্যামেরা দিতে ভয় পেতাম। এখন দেই। বাচ্চাদের গুরুত্ব না দিলে তারা দায়িত্ববান হতে শেখেনা। আমি ক্যামেরা ধরে রাখি, ও লুক থ্রু করে। অটো ফোকাস করা নিজেই শিখেছে: সাটার রিলিজ বাটনে অর্ধেক চাপ দিলে ফোকাস হয়, পুরা চাপ দিলে ছবি ওঠে। মাঝে মাঝে অবাক লাগে শিশুরা কিভাবে পরিবেশ থেকে শিখে ফেলে। এমন না যে এদের হাতেকলমে শিখিয়ে দিতে হয়! শিশুরা বড়ই আজব জিনিস।
উপরের কাঠবিড়ালীর ছবিটি (ছবি:৪) মেয়ের তোলা। ছবি তোলাতে ওর হাত পাকছে তা বেশ টের পাচ্ছি। কাঠবিড়ালীটা বাঁ পাশে ঘাসের উপরে ছিল। আমি বললাম, মা ওটার ছবি তোল। ক্যামেরা তাক করতেই লাফিয়ে লাফিয়ে সরে গেল ওটা। মেয়ে নিজেই ক্যামেরা প্যান করে ফোকাস করে ছবি তুলে ফেলল। ভাবিনি এত সুন্দর করে কম্পোজ করতে পারবে (বাচ্চাদের সাপেক্ষে)। এসএলআর ক্যামেরা বড়দের হাতে দিলেও অনেকেই ক্যামেরা আনুভূমিক রাখতে পারেনা। সে তুলনায় ভালই তুলেছে।
যখনই বাইরে বের হই, তখনই সে ধরে নেয় ন্যাচার পার্কে যাচ্ছি। তাড়া দিচ্ছিল কখন ন্যাচার পার্কে যাবো। বাইনোকুলারের সদ্ব্যবহার করতে হবে তো! নিয়ে গেলাম পার্কে। ততক্ষণে বিকেল হয়ে প্রায় আঁধার নেমে এসেছে। রবিবার বলে একদল মানুষ পিকনিক করতে এসেছে। আহারে, কয়দিন পরেই এগুলো ঢেকে যাবে বরফের সাদা চাদরে।
ছবি: ৫
মেয়েকে শেখালাম কিভাবে বাইনোকুলার এ্যডজাস্ট করতে হয়। টিউনিং রিংটা একটু শক্ত, নিজে এখনো ঠিকঠাক করতে পারেনা। স্বল্প পানিতে ম্যালার্ড ভেসে বেড়াচ্ছে খাবারের খোঁজে-- সেই দৃশ্যই দেখছে নিবিষ্ট মনে।
সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসি ঘরে, আবারো বন্দি হই চোদ্দ ইঞ্চি মনিটরের পর্দায়। জীবনটা এভাবেই চলে যাচ্ছে। কবে যে তীরন্দাজের মতো ঘুরতে ফিরতে পারবো!
With the Daylight Saving scheme we actually have to wake up before the sun rises to catch the 8 AM class. Because the 8 AM class is actually at 7 AM. Nobody is bothered that with the upcoming Winter it'd be dark outside when students have to go out to catch the bus for the early classes! Waiting for another vacation!
ReplyDeleteThat picture with that squirrel is really cute. :)
Thanks a lot, Mind Writer!
ReplyDelete