2008/09/24

ডাক্তার বিড়ম্বনা

১.

ঘটনা ২০০৬ সালের শুরুর দিকের। কয়দিন আগে একা একা গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাইছি। কানাডার অন্টারিওতে এধরনের লাইসেন্স পাইতে এক বছর সময় লাগে। আর যারা মিনিস্ট্রি অনুমোদিত ইনস্ট্রাক্টরদের কাছে প্রশিক্ষণ নেয় তাদের জন্য ৮ মাস। যাই হোক, লাইসেন্স পাওয়ার পরে আর তর সয়না-- এখানে দেখি, সেখানে দেখি, কোথায় সস্তায় গাড়ি পাওয়া যায়। তখন ডিসেম্বরের শেষের দিক। সবাই ক্রিসমাস নিয়ে ব্যস্ত। গাড়ি আর খুঁজে পাইনা। এক সময় মনে হচ্ছিল গাড়ি যদি ওয়ালমার্টে পাওয়া যেত সেখান থেকেই কিনতাম (শোরুমে যাওয়ার কথা অবশ্য চিন্তাও করতাম না)। যাহোক, জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে গাড়ি কিনলাম এবং তার কিছুদিন পরেই শুরু হলো বিপত্তি।

চোদ্দ গুস্টির কেউ কোনদিন চার চাকার মোটরগাড়ি চালায়নি। সে কারণেই মনে হয় ড্রাইভিং সীটে বাঁকা হয়ে বসে থাকতে থাকতে দুই/তিন সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হলো ব্যাকপেইন। অবস্থা এমন যে চেয়ারে বসতে পারিনা, আবার বসলে উঠতে পারিনা।

ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে গেলাম এক্সরে করাতে। তরুণী নার্স কাগজের মত কী একটা ধরিয়ে দিয়ে বলল গায়ের সব কিছু খুলে ফেলে ওটা পড়ে নিতে। শুনে আমার কান লাল হওয়ার অবস্থা। আমার মুখ দেখে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পর্দা ওয়ালা একটা ঘর দেখিয়ে দিল। সেখানে ঢুকে কাগজের সেই জামা পড়ে দুই হাতে সেটাকে ধরে এক্সরে টেবিলের উপর শুয়ে পড়লাম। একবার বাঁয়ে ঘুরে এক্সরে করে আবার ডানে ঘুরে করে। আমি নার্সের নির্দেশ মোতাবেক এদিক ওদিক পোজ দেই আর সাবধানে কাগজ ধরে রাখি; পাছে আবার ই্জ্জত না চলে যায়।

এরা পেশেন্টকে এক্স-রে রিপোর্ট দেয়না, সরাসরি ডাক্তারের কাছে পাঠায়। এটাই নিয়ম। নার্স ৪-৫ দিন পরে ডাক্তারের সাথে দেখা করতে পরামর্শ দিলেন।

এক সপ্তাহ পরে ডাক্তারের চেম্বারে আমি হাজির। আমার রিপোর্ট তার হাতে, কিছুটা চিন্তিত। গম্ভীর এবং কৌতূহলী সুরে আমাকে যা জিজ্ঞেস করল তা এরকম:

ডাক্তার: আপনার মেরুদন্ডে যে সার্জারি হয়েছিল এবং সেখানে মেটাল ইমপ্ল্যান্ট করা আছে সেটা আগে বলেননি কেন?

আমি: (পুরাপুরি হতভম্ব, ব্যাটা বলে কি?) কি কইতেছেন আপনি?

ডাক্তার: হ্যাঁ, এইতো দেখুন আপনার এক্স-রে রিপোর্ট।

আমি ক্যানাডা না বাংলাদেশে আছি চারাপাশটা দেখে সেটা আবার বোঝার চেষ্টা করলাম। নিশ্চিত হওয়ার পরে বললাম, 'দেখেন মিয়া জীবনে আমার কোন সার্জারি হয়নি, আর আপনি বলছেন মেরুদন্ডে মেটাল ইমপ্ল্যান্টের কথা?'

ডাক্তারও তখন বুঝতে পারলো অন্য কারো এক্স-রে রিপোর্ট আমার নামে চলে এসেছে, ভুলে। আমি স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলি। বাংলাদেশকে এতদিন খালি খালিই কানাডার কাছে ছোট করেছি বলে কষ্ট লাগল। এখানেও এসব হয় তাহলে!

পরের ঘটনাবলি অব্শ্য কানাডার মতই দ্রুত ও নির্বিঘ্নে ঘটে গেল, তাই সেগুলা নাহয় না লিখি।

No comments:

Post a Comment